1. admin@chattrachattri.com : admin :
  2. bigboss@yahoo.com : bb :
  3. shamkabir2003@gmail.com : shamkabir :
টিউশনে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কখন ওরা নাস্তা দেয়। - ছাত্র-ছাত্রী ডট কম
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:৫৩ অপরাহ্ন

টিউশনে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কখন ওরা নাস্তা দেয়।

  • বৃহস্পতিবার, ১ অক্টোবর, ২০২০
  • ১০৬৯ বার পড়া হয়েছে

ড. ইয়াহইয়া মান্নানঃ টিউশনে গিয়ে অপেক্ষায় থাকতেন কখন ওরা নাস্তা দেয়। আর নাস্তাই ছিলো তার সারাদিনের খাবারের একমাত্র অবলম্বন। জীবনের কঠিনতম আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে মোকাবেলা করেছেন।

ফলশ্রুতিতে সাফল্য জমেছে তার ঝুঁলিতে। বর্তমানে কর্মরত আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে।

জন্ম থেকে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায়। প্রাথমিক শিক্ষা সাতকানিয়াতেই। চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি। পরে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকিউলার বায়োলজি বিভাগে।

সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স ও মাস্টার্স শেষের পর শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন নিজের বিশ্ববিদ্যালয়েই। ৩ বছর শিক্ষকতার পর জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে নিউরোসায়েন্স বিষয়ে গবেষণা করতে যান জাপানের বিখ্যাত রিকেন সেন্টার ফর ব্রেইন সায়েন্স ইনস্টিটিউটে।

ওখানে প্রায় দেড় বছর কাজ করার পর ডেনমার্কের কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি নিয়ে সেখানেই গবেষণার জন্য যান। বর্তমানে পিএইচডি গবেষণার শেষ বর্ষে আছেন বলে জানান অধ্যাপক সোনম।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি তার জীবনযুদ্ধের কথাগুলো শেয়ার করেন। বেশ ইতিবাচক সাড়া পড়েছে সেখানে। অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেরা মন্তব্যের পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গে শেয়ারও করছেন।

তার লেখা হুবহু তুলে ধরা হলো:

আমার জীবনের গল্প ছোটবেলায় আমরা খুব দরিদ্র ছিলাম। কতদিন এমন গেছে বাসায় খাওয়ার কিছু নেই। মা তখন টমেটো তেলে দিয়ে ভর্তা করে ফেলত। কারণ এটা দিয়ে শুধু শুধু ভাত খেতে গলায় আটকায় না।

কখনো কখনো একটা ডিম ভাজা হত। সেই ডিম তিন চার জন ভাগ করে খেতাম। পুরো একটা ডিম খাওয়া কখনো দেখিনি। ছাগল কোরবানি দিতাম। যখন একদম ছোট ছিলাম তখন গরু কোরবানি দেয়া হতো।

এরপর ওইরকম সামর্থ্য হয়ে উঠেনি। কোনো কোনো বছর কোরবানি দেয়া হতো না। টাকা ছিল না। চারপাশের সব বাড়ি থেকে গরুর মাংস রান্নার সুগন্ধ ভেসে আসত। আমরা অপেক্ষা করতাম যদি কেউ এসে দিয়ে যায়। মা বেরুতে দিত না। ছোট ছিলাম। কতকিছু বোঝার সময় হয়নি তখন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরিবারের অবস্থা আরো খারাপ হয়। তখন চট্টগ্রাম শহরে বাসা ভাড়া করে থাকি। বাসা ভাড়া দিতে জান যায় অবস্থা। পড়ার টাকা তো অনেক দূরে।

দিনে ৩০ টাকা পেতাম। সেই টাকা ইউনিভার্সিটি যাওয়া আসাতেই শেষ হয়ে যেত। দুপুরে লাঞ্চ হিসেবে একটা আলুর চপ বা একটা সিঙ্গাড়া। কত দুপুর না খেয়েও থাকতে হয়েছে। কত রাত না খেয়ে থাকতে হয়েছে।

প্রথম বর্ষ পরীক্ষার ফরম ফিলআপ করার টাকা নেই। পরীক্ষা শুরু হওয়ার এক মাস আগে শুরু করলাম টিউশন। ওই টিউশনি থেকে এক মাসের অগ্রীম নিয়ে ফরম ফিলআপ করি।

আমার বান্ধবীরা অনেক সময় আমাকে ফোন দিত আমি কি পড়ছি জানার জন্য। আমি তখন টিউশনিতে। টিউশনিতে গিয়ে অপেক্ষা করতাম নাশতা কি দেয় তার জন্য। ওইটাই আমার সারাদিনে খাওয়া একমাত্র খাবার ছিল।

তিনটা টিউশনি শেষ করে বাসায় আসতে আসতে বাজত রাত এগারোটা। এরপর খেয়ে পড়তে বসা। সন্ধ্যা থেকে পড়তে বসবো সেই বিলাসিতা করার কোন সুযোগ আমার ছিল না।

তখন দরিদ্রতাকে খুব ছোট মনে হতো। নিজেকে ছোট লাগতো। আমার বান্ধবীদের অনেকে আমি যে এত দরিদ্র সেটা হয়তো তখন জানতো না।

আমার বান্ধবী স্বর্ণা আমাকে এক জোড়া সিলভার কালারের কানের দুল গিফট করেছিল আমি কান ফোঁড়ানোর পর। অনেক দিন পর্যন্ত ওই কানের দুল আমার একমাত্র কানের দুল ছিল।

বছরের পর বছর ঈদের জামা কিনতে পারিনি। কোন বিয়েতে মেতে হলে স্বর্ণা, নাবিলা বা তারিনের কাছ থেকে শাড়ি নিতাম। কারণ প্রোগ্রামে পরার মত কাপড় ছিল না। এই মেয়েগুলো এত করেছে আমার জন্য মাশাআল্লাহ।

আমি আমার সব বান্ধবীর বাসায় গিয়েছি, আমার বাসায় আমি কখনো দাওয়াত দিতে পারিনি। লজ্জা লাগতো। বাসায় সোফা নাই। ডাইনিং টেবিল নাই। কী খাওয়াবো। এসব ভেবে তখন লজ্জা লাগতো।

ওই পরিস্থিতি থেকে সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায়, আল্লাহর অসীম অনুগ্রহে আর মা বাবার দোয়ায় আজ আমি এখানে।

এখন আমি যেখানে থাকি আমার বাসা ভাড়াই প্রতিমাসে এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা। আমার মাসিক হাত খরচ এক লাখ টাকার চেয়ে বেশি। আমার গবেষণা প্রজেক্টের ফান্ড কোটি টাকার চেয়ে বেশি।

এই সম্পূর্ণ টাকা ডেনিশ সরকার আমাকে দিচ্ছে। আমার পড়ালেখার জন্য। এর আগে জাপান সরকার দিয়েছে তাও আমার পড়ালেখার জন্য। এখন আমি এখানে তার কারণ আমি এক সময় অসম্ভব সংগ্রাম করেছি।

আমি যখন কাউকে বলি যে একাগ্রতা, পরিশ্রম এবং জেদ সব বদলাতে পারে তখন আমাকে অনেকেই বলে ‘আপনি এগুলা বুঝবেন না। জীবন অনেক কঠিন।’ আমি যখন উত্তর দিই আমি বলি জানি, আমি এই সময় পার করেছি। বেশিরভাগই বিশ্বাস করে না।

এখনকার আমাকে দেখে এক সময় আমি যে ২ টাকার জন্য দুপুরে লাঞ্চ করতে পারিনি, সেটা বিশ্বাস হওয়ার কথা ও না।

আমি জানি বলেই আমি বলি-পৃথিবীতে অসম্ভব বলে কিছু নাই। কিন্তু যেটা থাকতে হবে সেটা হচ্ছে ব্যক্তিত্ব, এমন সামর্থ্য যেন কেউ ছোট করে কথা বলতে না পারে। থাকতে হবে জ্ঞান।

এক সময় আমাদের একটা ডিম চারজনে ভাগ করে খেতে হয়েছে। আর আমি এখন চাইলে দিনে কয়টা করে ডিম খেতে পারি। এখন আমি চাইলে বিশ্বের সবচেয়ে দামি রেস্টুরেন্ট সেখানে খেতে পারি। আমি চাইলে সবচেয়ে দামি ব্র্যান্ডের সবচেয়ে দামি জিনিস কিনতে পারি।

আমার কাছে সফলতা মানে শূন্য থেকে সর্বোচ্চ পজিশনে যাওয়া। যাদের অবস্থা ভালো, যারা দিনে তিনবেলা করে খেতে পেয়েছে, প্রতি ঈদে নতুন জামা পেয়েছে, টাকার জন্য কখনো টেনশন করতে হয়নি, তারা ভালো করাটা আমার কাছে স্বাভাবিক। তারা ভালো না করাটাই অস্বাভাবিক।

রাজা/রানি থেকে রাজ্য পেলে সেটা স্বাভাবিক বিষয়। শূন্য থেকে রাজ্য সৃষ্টি করাটা আমার কাছে অনেক। আমি কখনো প্রিন্সেস ছিলাম না। আমি সবসময়ই কিং অফ মাই ওন কিংডম। সম্ভবত তাই এখন আমি আমার অতীত নিয়ে অসম্ভব গর্ব অনুভব করি।

এখন আমি মনে করি দারিদ্রতা আসলে গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে মানুষ হিসেবে দরিদ্র একজনের সামর্থ্য অনেক বেশি। ওই পজিশনে থেকে বেশিরভাগ মানুষ হয়ত ভাল কিছু করতে পারত না। যে পারে সে পৃথিবীতে সবই পারে।

এই মহিয়সী নারীর প্রতি “ছাত্র-ছাত্রী ডট কম” এর পক্ষ থেকে রইলো শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

লেখাটি সংগ্রহ করেছেন প্রফেসর ড. ইয়াহইয়া মান্নান,

অধ্যাপক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

ভালো লাগলে এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
 

কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি

Theme Customized By BreakingNews