1. admin@chattrachattri.com : admin :
  2. bigboss@yahoo.com : bb :
  3. shamkabir2003@gmail.com : shamkabir :
পাহাড় পানে মেঘের খোঁজে - ছাত্র-ছাত্রী ডট কম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন

পাহাড় পানে মেঘের খোঁজে

  • বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২০
  • ৩৭১ বার পড়া হয়েছে

বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর করাল থাবা। স্কুল- কলেজ বন্ধ। চার দেয়ালে বন্দী দীর্ঘ আট মাস। ভয়, আতংককে পিছনে ফেলে ঠিক করলাম দূর পাহাড় আর মেঘের দেশে যাব দু’য়েক দিনের জন্য। জানিনা, কারো কাছে আমার এ ভ্রমণ ভাবনা অতিরঞ্জন মনে হবে কিনা! প্রথমেই বলছি, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টি নিয়েই দেখবেন। করোনা আক্রমণের বিরুদ্ধে সমস্ত নিয়ম মেনেই শুরু করলাম আমাদের যাত্রাপথ। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। আমার গল্পের প্রারম্ভিকায় পাত্র পাত্রীরা যথাক্রমে —-ঃ
আমার পরিবার, বন্ধু আঁখির পরিবার, বন্ধু নাসিমার পরিবার, স্নেহের ছোট ভাই সুরুজ ও তার বউ তিশা, আদরের ভাগ্নি মুমতাহিন।

বিআরটিসি বাসস্ট্যান্ড থেকে যাত্রা হলো শুরু। শহর ছেড়ে হাটহাজারি, নাজিরহাট, ফটিকছড়ির পরই শুরু হলো সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। রামগড় চা বাগানের মনোরম পাতা তোলার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হতে হতে চোখ আটকে গেলো বিস্তৃত সব রাবারের বাগানে। আলো ছায়ার নাচন দেখতে দেখতে বাস এগিয়ে যেতে থাকলো পাহাড়ের পথ ধরে। রাবার বাগানের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া এমন মসৃণ পথ শেষ করে মানিকছড়িতে এসে পড়লাম। পথের দু’ পাশে উঁচুনিচু পাহাড়ের সারি। পাহাড়ের সাথে মেঘের অবিচ্ছেদ্য মিলন। চারপাশের ঘন মেঘের কুন্ডলী ঘিরে রেখেছে উঁচু পাহাড়ের চূড়াগুলোকে। মাটিরাঙ্গার রাঙ্গা মাটি আর পাহাড়ের সবুজাভ রূপের পরই বাস এসে পড়লো আলুটিলার পাহাড়ি পাদদেশে। তারপর আমাদের গন্তব্য শহর খাগড়াছড়িতে এসেই ক্লান্তি মুক্তির পথ পেয়ে খুশিতে আত্মহারা সবাই,বিশেষ করে ছোটরা। শহরের অনেকটা প্রবেশ পথেই আগে থেকে নির্ধারিত গ্রীন স্টার হোটেলে ওঠলাম সবাই। পরিপাটি হোটেল পেয়ে সবাই খুবই খুশি। রেডি হয়ে সবাই খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ হর্টিকালচার পার্কে চলে গেলাম। সাজানো গোছানো পার্কে চলতে লাগলো ফটোসেশন পর্ব৷ ঝুলন্ত ব্রিজের দোল খাওয়া সত্যিই ভুলার না। পাহাড়ি টঙে দই খেয়ে এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে লাগলো সবাই। সবই পরিচ্ছন্ন, যা চোখে পড়েছে সবারই। বড় বড় গাছে দোলনা বাঁধা! ছোট বড় সবাই দোল খেতে খেতে শৈশবের আনন্দে ফিরে গেলাম । তিন বন্ধুর গল্প চলতে লাগলো সমান তালে। কত রকমের কথা, কত আগের কথা!! পার্ক পর্ব শেষে আমরা হোটেলের সামনেই ট্র্যাডিশনাল রেস্টুরেন্টে লাঞ্চের জন্য ওঠলাম। চাকমা দাদা আর দিদি নিজেরাই চালান এ খাবারের দোকান। এত মজা দিদির প্রতিটা আইটেম! রীতিমতো অবাক আমরা! সম্পূর্ণ ঘরোয়া পরিবেশে লোভনীয় সব খাবার। ওনাদের আতিথেয়তা হয়তো অনেকদিন মনে থাকবে।

হোটেলে বিশ্রামের পরপরই চাঁদের গাড়িতে করে আমরা আলু টিলা পরিদর্শনে বের হলাম। পাহাড়ি পথ পেরিয়ে এসে পড়লাম আলুটিলায়।বিশাল বটবৃক্ষের পাদদেশে লেখা, ‘ আপনি কি একজন সাহসী অভিযাত্রী? তাহলে রহস্যময় সুরঙ্গে আপনাকে স্বাগতম।’ আলুটিলার ওপরে দাঁড়িয়ে পুরো খাগড়াছড়ি শহরটাকে দেখা যায়। সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে একেবারে অনেকটা নিচে অবাক করা সুরঙ্গ! হা করে যেন ভয় দেখাচ্ছে সবাইকে! প্রাগৈতিহাসিক যুগের পাথুরে গুহা। সাহস করে সবাই সিদ্ধান্ত নিলাম গুহা দিয়েই বের হবো। ভয়, গা ছমছম করা দম বন্ধ অবস্থা! সাথে নতুন কিছু দেখার দুঃসাহস।মোবাইলের মৃদু আলোয় পথ চলা শুরু হলো সবার। সমস্ত ভয়কে পিছনে লাথি মেরে ছোটরাও গুহা পার হতে শুরু করলো। এ্যাডভেঞ্চার কাকে বলে!! ঠান্ডা ঝিরিঝিরি পানি, পাথুরে পথ! ওপরে ও পাথর! শেষ হলো গুহা অতিক্রম। সবাই তৃপ্ত। সত্যিকারের অভিযাত্রী সবাই।

ফিরে গেলাম হোটেলে। বিশ্রাম নিয়ে হোটেলের ছাদে পাহাড়ের সাথে লাগোয়া বাগানে সবাই লুকোচুরি খেলতে শুরু করলো। মনোরম বাগান। রুচি আর পরিশ্রমের সম্মিলিত ফসল এ বাগানটা! ছবি তোলায় মত্ত সবাই। এই গল্প, সেই গল্প!! নিউটনদা, রফিক ভাই, আমার বর— মনেই হয়নি ভিন্ন ঘরের ভিন্ন মানুষ। অথৈ, নীলা, নিহাদ, যশ — বুঝিইনি নিজের সন্তান না বলে! এ আরেক অপার্থিব জগত! সুরুজ, তিশা যেন বাচ্চাগুলোর পুনঃসংস্করণ!! আঁখি, নাসিমা এত বছরেও এতটুকু পাল্টাসনি!! আমার মেয়েরা একটা জগত পেয়ে খুবই খুশি, মা’ হিসেবে ঠিকই বুঝেছি। আবারো দাদার খাবারের দোকানে রাতের ডিনার আমাদের। প্রতিবারই চমক! এত মজা, অতুলনীয় স্বাদ! ঠিক হলো সাজেক থেকে ফিরেও একই হোটেল, একই খাবারের দোকানেই খাবো।

খুব ভোরে ওঠে নাস্তা সেরে চাঁদের গাড়িতে চড়ে সাজেকের পথে যাত্রা। শুরু হলো পাহাড় আর পাহাড়ি জীবনের মাঝ দিয়ে ছুটে চলা। দু’ পাশে পাহাড় আর পাহাড়! চারদিকে সবুজের সমারোহ। মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে তন্মন। আকাশচুম্বি পাহাড়ের বুকে দাঁড়িয়ে আছে বৃক্ষদেবী। পৌষে হাওয়া পাহাড় জুড়ে। মুক্তোর দানার মতো শিশিরের স্বচ্ছ ফোঁটা। সবুজ পাহাড়ে অলস কুয়াশাময় শীতের প্রকৃতি। পথের দু’ পাশে নাম না জানা বুনো ফুল৷ অভিনন্দন জানাচ্ছে সমস্ত প্রকৃতি। পথে পথে ছোট ছেলে- মেয়েরা টাঅাটাআ.. বাইইবাইই বলে সমস্বরে চিৎকার করছে। যেন নিয়মের মধ্যেই পড়েছে ওদের, অজানা অচেনা মানুষদের অভিনন্দিত করার। মানুষ ওরাই!! ভাবলাম আমি। সমস্ত পথ জুড়ে ওদের শব্দটায় কানে বাজলো যেন! তন্ময় ফিরে দেখলাম আমরা এসে পড়েছি রুইলুই পাড়ায়!! স্বপ্নের মেঘরাজ্য! প্রিয় সাজেক!! গাড়ি থেকে নেমেই পূর্ব নির্ধারিত সাজেক বিলাস হোটেলে ওঠলাম। সদ্য বানানো পরিপাটি হোটেলটা। সমতল ভুমি থেকে ১৭০০ফুট ওপরে ও আধুনিকতার ছোঁয়া। রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দা। পাহাড় যেন হা করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে! দূরে সব পাহাড় আর পাহাড়। লাঞ্চ সারলাম “হোটেল পেদা টিংটিং ” এ। পেদা টিংটিং মানে– পেট ভরে খাও। খেয়ে একটু বিশ্রামের জন্য হোটেলে গেলাম। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফটোসেশন হলো সবারই। চারদিকে পাহাড়, খোলা আকাশ,সবুজের সমারোহ। সুরুজের দেখানো স্টাইলে একের পর এক ক্লিক। বিশুদ্ধ বাতাস, শুদ্ধ পরশ! এক কথায় ভালোলাগার সর্বোচ্চ মুহূর্ত! শুরু হলো কংলাক পাহাড়ে যাত্রার পালা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৮০০ ফুট উচ্চতা এ পাহাড়ের। চাঁদের গাড়িতে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ অতিক্রম করে পথেই নেমে গেলাম হাঁটার উদ্দেশ্যে। সবাই হাঁটার সহযোগি হিসেবে বাঁশ কিনতে ব্যস্ত। আমরা অনেকেই নিইনি বাঁশ। মনে প্রবল জোর সবার! দুঃখের ব্যাপার হলো সবার সাথে আমি পাহাড়ে ওঠতে পারিনি! ছোট মেয়েকে নিয়ে টঙের দোকানে বসে রইলাম।

পাশে বসা মানিকগঞ্জ থেকে আসা ভদ্রলোকের সাথে জম্পেশ আড্ডায় মেতে ওঠলাম। চা ও খাওয়ালেন লোকটা। নাম জানতে ভুলে গেছি লোকটার। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখলাম আমার বর এসে পড়লো পাহাড় থেকে। আমাকে আর পায় কে!! এক লাফে ওঠে দুই মিনিটও লাগেনি পাহাড়ে ওঠতে। কে যেন পিছন থেকে ঠেলছিল আমাকে! পথের মানুষরা বলতে লাগলেন, ভাই আপনি কি ট্রেকিং করেন??! কে শুনে কার কথা! ওঠেই মুগ্ধ আমি। কম বয়সী ছেলে একটাকে অনুরোধ করলাম আমাকে কয়েকটা ছবি ওঠিয়ে দিতে। সাথে সাথে ক্লিক!! রবি বাবু ভুল বলেছেন মনে হয়, পৃথিবীতে কে, কাহার?? আমি বলি, পৃথিবীতে সবাই সবার।

কংলাক পাহাড় থেকে নেমে আমরা গেলাম হেলিপ্যাডের সামনে। ওইদিন ওখানে দেখা গায়ক নোবেলের সাথে। বউ নিয়ে বেড়াতে এলেন সাজেক। ছবি ওঠালাম ওনার সাথে। বাচ্চারা নোবেলকে পেয়ে খুবই খুশি। সন্ধ্যা নেমে এলো পাহাড় জুড়ে। আকাশের সাদা মেঘগুলো যেন আমার হাতের কাছেই। অসাধারণ সাজেক! ধন্য আমরা! সকালের সাজেক এতটা মনকাড়া যে, সারাজীবন মনে গেঁথে থাকবে হয়তো। চারদিকে মেঘ আর মেঘ! কল্পনা আর বাস্তবের সন্নিবেশ! আহ! জীবনটা ষোল আনায়ই পূর্ণ হলো যেনো! মেঘের রাজ্যে নিজেকে মেঘকুমারী মনে হতে লাগলো! স্নিগ্ধ সাজেক, মেঘময় সাজেক! রূপকথার সাজেক। যেখানে পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে মেঘেরা ঘুমায়।

পাহাড় আমার কাছে ধ্যান, জ্ঞান, স্বপ্ন, আকাঙ্ক্ষা আর প্রার্থনার সংযোগ। নিজেকে চেনার, নিজেকে মুখোমুখি দাঁড়াবার ক্ষেত্র। মেঘের মধ্য দিয়ে পাহাড়ি সরু পথে চলা! আশ্চর্য রূপ সে প্রকৃতির, কী তার সীমাহীন নিমজ্জন আর হৃদয়ের গভীরতর সত্যের উপলব্ধি। সাজেক, আমার চেতনার রঙে রাঙিয়ে দেখবো তোমায়; আমার দেখার দৃষ্টিতেই তুমি সুবিশাল, অনন্ত।

খাগড়াছড়ি এসে জুম পয়েন্ট লাইনে কিছুটা কেনাকাটা করে আবারো আমাদের সেই গ্রীন হোটেলে ওঠা। দাদার হোটেলে লাঞ্চ সেরে চট্টগ্রামের পথে রওনা হওয়ার প্রস্তুতি সবার। শান্তি বাসেই টিকেট করা আমাদের। মন খারাপ করা অনুভূতি। কত সহজে ভালো থাকা যায় তা শেখায় পাহাড়ি জীবনযাত্রা। নিষ্পাপ প্রকৃতি.. কর্ম পাগল পাহাড়ি মানুষ। অপূর্ব মুগ্ধতার আবেশ নিয়ে আমরা ছুটতে শুরু করলাম পরিচিত প্রেক্ষাগৃহে। আবারো আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ের হাতছানি। ঘুম ঘুম চোখে সমস্ত ক্লান্তি নিয়ে বিদায় জানালাম পাহাড়ি জনপদকে। ভালো থেকো পাহাড়, ভালো থেকো মেঘরাশি। নিস্তব্ধ অনুভূতি, ঘোরলাগা ভালোলাগা! ভালোবাসি, ভালোবেসো….

লেখকঃ সুলতানা কাজী, সহকারী শিক্ষক(বাংলা), অংকুর সোসাইটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
২৪/১১/২০২০খ্রিঃ

ভালো লাগলে এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
 

কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি

Theme Customized By BreakingNews