৮২ বছর বয়স্ক ইউসুফ মিয়া পেশায় কাঠমিস্ত্রী। স্ত্রী মারা গেছে অনেক বছর আগে। গ্রামে পাশে থাকার আর কেউ না থাকায় অনোন্যপায় হয়ে চিটাগাং শহরে একমাত্র ছেলের বাসায় এসে উঠেছেন। বয়সের ভারে তিনি এখন এতো বেশী ন্যুজ ও দূর্বল যে, খাবারগুলো পর্যন্ত ঠিকমতো খেতে পারেনা। দৃষ্টি শক্তিও প্রায় হারিয়ে ফেলেছেন। শারিরীক দুর্বলতার কারণে হাত-পা কাঁপে। মুখে খাবার দিতে গেলে অর্ধেক খাবার গাল বেয়ে নিচে পড়ে যায়। গায়ের কাপড় ও বিছানাতে কিছুটা ময়লার সৃষ্টি হয়।
ইউসুফ মিয়ার এই বিষয়টি আধুনিকমনস্ক ছেলে ও ছেলে বউয়ের পছন্দ না। কখনো কখনো তারা বৃদ্ধার প্রতি বিরক্তি ও রাগ প্রকাশ করতো এবং কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিতো। দিন দিন ইউসুফ মিয়ার অবস্থার আরোও অবনতি হতে থাকে। গাল বেয়ে পড়া মুখের খাবার দেখে বিরক্তি প্রকাশ করায় ছেলে বৃদ্ধার জন্য আলাদা খাবার টেবিলের ব্যবস্থা করে।
বৃদ্ধার একমাত্র নাতি সাইদুল চিটাগাং মুসলিম হাইস্কুলে ৭ম শ্রেণির ছাত্র। বৃদ্ধ দাদার প্রতি তার অনেক টান। দাদার প্রতি বাবা-মায়ের এমন আচরণে সে খুব কষ্ট পায়। সে সময় পেলেই দাদাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতার চেস্টা করে। খাবার খাওয়ার সময় যাতে খাবারগুলো মুখের বাইরে পড়ে না যায় সেজন্য সে দাদাকে হেল্প করে।
কয়দিন আগে ভাত খাওয়ার সময় ইউসুফ মিয়া চেয়ার থেকে পড়ে যান এবং ভাতের প্লেটটি ভেঙে যায়। মাথা তুলে একটু দূরে পাশের টেবিলে বসে থাকা ছেলে ও ছেলের বউয়ের দিকে অপরাধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন এবং চোখ থেকে গড়িয়ে পানি পড়তে লাগলো। ছেলে এবং ছেলের বউ ঠিকই বৃদ্ধার ওপর খুবই রাগ করলো এবং উবাকে প্লেট ভাঙার দায়ে বকাঝকা করলো। ছেলের বউ ছেলেকে বাজার থেকে একটি প্লাস্টিকের থালা আনতে বললো। তারা সিদ্ধান্ত নিলো এখন থেকে বৃদ্ধকে প্লাস্টিকের থালা দিয়ে ভাত দিবে যাতে ভেঙে না যায়। তখন সাইদুল তার বাবাকে বাজার থেকে একটি নয় তিনটি প্লাস্টিকের প্লেট আনার জন্য বললো।
সাইদুলের বাবার প্রশ্ন, “তিনট প্লেট কেন?”
সাইদুল জবাব দেয়, “একটি প্লেট দিয়ে দাদুকে খাবার দিবে আর দুটি প্লেট আমি রেখে দেবো। তোমরা দুইজন যখন দাদুর মতো বৃদ্ধ হবে তখন তোমাদেরকেও এই দুটি প্লাস্টিকের প্লেটে করে ভাত দেবো।”
ছেলের কথা শুনে বাবা-মা খুবই লজ্জিত হলো। তারা তাদের ভুল বুঝতে পারলো। বৃদ্ধ ইউসুফ মিয়াকে আবার আদরযত্ন করে নিজেদের টেবিলে ভাত খাওয়াতে লাগলো।
/ওমায়রা বিনতে জাকির
কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি
Leave a Reply