সুলতানা কাজীঃ সাত সকালে ঘুম তাড়ানোর অভ্যেস আমার। কুয়াশা জড়ানো সকালে এতোদিন চারদিক ধোঁয়াশে ঠেকতো! আজ খেয়াল করলাম, খুব সকালেই বাসার সামনের গাছে পাখিদের গুঞ্জন! বুঝলাম, শীত ল্যাজ গুটাতে ব্যস্ত এখন! দুয়ারে বসন্ত!!
" আকাশে বহিছে প্রেম,
নয়নে লাগিল নেশা
কারা যে ডাকিল পিছে!
বসন্ত এসে গেছে।!"
দখিনা বাতাস। চারপাশে ফুটছে ফুল। পুলকিত মন, উচ্ছ্বাসভরা ক্ষণ। গা টান ধরা মৃদু ঠান্ডা…. শীতের উপসংহার! চোখ বুঁজেই অনুভব করছি এসব!
প্রকৃতি সেজেছে নবরূপে। জীর্ণতাকে পিছে ফেলে শুরু হতে চললো বসন্তের আগমন। সবুজ পত্রপল্লবের আবডালে বসন্তের দূত কোকিলের কুহুকুহু ডাকে মুগ্ধ সকলে। আহা! বসন্ত আসলো বলে!…… নেই কোথাও হসন্ত আর!!
বসন্ত আর ভালোবাসা একই সূত্রে গাঁথা যেনো। পাখিরা প্রণয়ীর খোঁজে বের হয়, ঘর বাঁধে। মৌমাছিরা মধুর খোঁজে হন্যে হয়! এক ফুল থেকে অন্য ফুলে ছোটে।…… এমনই এক মধুর ঋতু বসন্ত! আসলেই বিশেষ! ভালোবাসা প্রকাশের জন্য ব্যাকুল হৃদয় খোঁজে ভালোবাসা দিবস! হুম, তাও এ বসন্তেই।
ফাগুন! তুমি ভালোবাসা যেমন শিখিয়েছো, তেমনই বাঙালিকে প্রিয় ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রামেও লিপ্ত করেছো। ১৯৫২ সালের এমনই এক বসন্তের দিনে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ আরো নাম না জানা অসংখ্য শহিদের রক্তের বিনিময়ে, বাঙালিরা রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে নিজেদের অস্তিত্বের এবং গৌরবের অলংকার হিসেবে পেয়েছিল। সালাম, শ্রদ্ধা সেসব বীর শহিদদের প্রতি। ঋতুরাজ বসন্ত তাই আমাদের আবেগ, ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশেরও এক বিশেষ ঋতু। বসন্ত আমাদের কাছে চিরায়ত প্রেম ও বিদ্রোহের যুগল আবাহন ও।
বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বসন্তে অনেক ফুলের সমাহার দেখে বিস্মিত হয়ে সেই কবে লিখে গেছেন,
” আহা! আজি এ বসন্তে..
কত ফুল ফোটে, কত বাঁশি বাজে, কত পাখি গায়।”
আবার বসন্তকে স্বল্পস্থায়ী মনে করে তিনি লিখেছেন,
” কেনরে এতই যাবার ত্বরা,
বসন্ত – তোর হয়েছে কি ভোর গানের ভরা।”
বিরহের কবি নজরুল প্রকৃতিতে আসা বসন্তক্ষণকে পৃথিবীর স্বর্গ বলে অভিহিত করেছেন। কবির ছন্দময় সুরে বিমোহিত হয়ে গানের এই পাখিগুলোই পৃথিবীতে সন্ধান এনে দেয় বসন্ত নামক স্বর্গ। তিনি লিখেছেন,
” ফুটলো যেদিন ফাল্গুনে হায়,প্রথম গোলাপ কুঁড়ি,
বিলাপ গেয়ে বুলবুলি মোর গেল কোথায় উড়ি।”
কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বসন্ত উপলব্ধি করেছেন এভাবে,
” ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত”।
আসলেই, ফুল ফুটুক আর না ফুটুক……
আসছে বসন্ত!! বসন্ত আমাদের হাসায়, নতুন করে সাজতে শেখায়, বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা যোগায় সবসময়। ফাগুনের আগুন মনের ক্লান্তি, ঘৃণা, জড়তা দূর করে ভালোবাসাকে আরো বেশি রঙিন করে তুলে। তাই বিবর্ণতা নয়, রঙের পথেই হোক আমাদের উত্তরণ। সকল কুসংস্কারকে দূর করে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দুর্নিবার প্রচেষ্টার বার্তা আসে বসন্ত থেকে।
জীবনটাকে পুরোটাই বসন্ত ভেবে, অসুন্দরের পায়ে শেকল বেঁধে এগিয়ে চলায়’ই হোক করোনাকালীন বসন্তের লক্ষ্য। এগিয়ে চলি সামনে যাওয়ার জন্য নয় শুধু!! ভবিষ্যত পৃথিবীর উদাহরণ হওয়ার জন্যই। সবার সুস্থতা কামনায়…..
লেখকঃ সুলতানা কাজী, শিক্ষক
০৯/০২/২০২১
কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি
Leave a Reply