1. admin@chattrachattri.com : admin :
  2. bigboss@yahoo.com : bb :
  3. shamkabir2003@gmail.com : shamkabir :
"স্বনামে পুরুষ ধন্য, পিতৃ নামে আধা, শশুর কুলে পুরুষ ধন্য, তারে বলে গাধা” - ছাত্র-ছাত্রী ডট কম
বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪, ০২:৪৫ অপরাহ্ন

“স্বনামে পুরুষ ধন্য, পিতৃ নামে আধা, শশুর কুলে পুরুষ ধন্য, তারে বলে গাধা”

  • সোমবার, ২২ জুন, ২০২০
  • ৩৭৯ বার পড়া হয়েছে

বাবার আদর্শ

অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম

“স্বনামে পুরুষ ধন্য
পিতৃ নামে আধা,
শশুর কুলে পুরুষ ধন্য
তারে বলে গাধা”

এই শ্লোকটি আমরা ৯ ভাই জীবনে অসংখ্যবার শুনেছি আমার বাবার কাছ থেকে। তার ব্যাখ্যাও তিনি অতি চমতকার করে বিভিন্ন গল্পের মাধ্যমে বাচ্চা বয়সে মাথার মধ্য ঢুকিয়ে দিতেন। আমাদের ৮ ভাইয়ের ছেলেবেলার গল্প মুটামুটি একই রকম। একই স্কুলে পড়া এবং তারপর ঢাকার কোন কলেজে উচ্চমাধ্যমিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল বা চুয়েট। সে সুত্রে একাধারে ২/৩ ভাই একই স্কুলে বিভিন্ন ক্লাসে পড়ত। ব্যাতিক্রম হল যখন আমার ঠিক আগের ভাইটিকে উন্নত স্কুলশিক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় ভাইয়ের সাথে ফরিদপুরে পাচার করা হল। পঞ্চম শ্রেনী থেকে আমি সংসার এর আংশিক দেখভাল করার দায়িত্ব পেলাম। বাবার পা এর সমস্যা প্রকট হবার পুর্বে অল্প কিছুদিন বাজার করার ট্রেনিং নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল। শুক্র, সোম ও বুধবার হাটে যেতাম সাথে একজন ভৃত্য পিছে হাটত ধামা (বেতের তৈরি এক ধরনের পাত্র) নিয়ে। আমাকে দেখলেই মাছ ও সবজি বিক্রেতারা দুর থেকে গোলদার সাহেব আসেন বলে ডাক দিত। প্রায় ৩০ বছর আগের ছোট গোলদার কে তাদের সেরাটাই দিতে চাইত। খুব দামাদামি করার প্রয়োজন পড়ত বলে মনে পড়ে না। কখনও মনে হয়েনি তারা সেই বাচ্চাটিকে ঠকিয়ে দিয়েছে। এর কারন মনে হয়ে আমার বাবার অসাধারন ব্যক্তিত্য। তিনি সাথে সাথে হাটে না গেলেও উনার ছায়া দোকানীরা মনে হয় আমার মুখে দেখত। ৬ষ্ঠ ক্লাস হতে সংসারের প্রায় সব আয় ব্যায়ের হিসাব আমাকেই রাখতে হত। আমাদের মূল আয় ছিল কৃষিজমি হতে বছরে একবার উতপাদিত কয়েকশ মন ধান। সেটা গোলায় (Grain Silo) সংরক্ষন করে রাখা হত সারা বছর বিক্রি করে চলার জন্য। একেকবারে ৩০-৫০ মন ধান বিক্রি হত মূলত রাংগা মিয়া নামক ব্যাপারীর কাছে। আমি বড় ২/৩ ভাইয়ের মাসিক খরচের জন্য পাঠানোর জন্য ও সংসারের খরচের টাকা রাংগামিয়ার কাছ থেকে অগ্রিম নিয়ে মানি অর্ডারের জন্য পোষ্ট মাষ্টার দাদুর কাছে টাকা ও ঠিকানা পৌছে দিয়ে আসতাম। রাংগা মিয়াকে বাবার অনুমতি দেওয়া ছিল আমি চাইলে ১৫০০০/= পর্যন্ত সে বিনা বাক্যব্যয়ে দিয়ে দিবে। আমার সহপাঠীরা খুব অবাক হত ৬ষ্ঠ শ্রেনী পড়ুয়া বালকের উপর তার বাবা, ব্যাপারী রাংগা মিয়া ও পোষ্ট মাষ্টার দাদুর আস্থা দেখে। আমি চাইলে যে এর থেকে কিছু টাকা উড়িয়ে বিপথে যেতে পারতাম না তা না। কিন্তু বাবার প্রায় সবকথাই আমাকে দারুনভাবে প্রভাবিত করত।
সংসারের দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে লোহার সিন্ধুকের চাবিও আমার দায়িত্বে থাকত। সেই সিন্ধুকের মধ্যে আমাদের টাকা পয়সা, দলিল, গুরুত্বপুর্ন কাগজপত্র থাকত। সিদ্ধুকের সবচাইতে ভিতরের অংশ যেটাকে বলা হত Safe Vault সেটা খোলা বন্ধ করার জন্য বিশেষ ট্রেনিং দরকার হয়। খুব অল্প সংখ্যকবার সেটা খোলা/বন্ধ করা হত। কারন সেখানে অতি যত্লে সুরক্ষিত থাকত বিভিন্ন ’আমানত’। অভিজাত বাড়ী বা বাবা স্কুলের ওস্তাদজী হওয়ায় আমাদের সিন্ধুকে বাইরের মানুষের হাত কখনও পড়েনি। দুর-দুরান্ত হতে মানুষ আসত কারও কিছু জমানো টাকা রাখতে হবে, কারও বা গয়না অথবা জমির দলিল। এগুলো সাদা কাগজে অথবা কাপড়ে মুড়ে Safe Vault এ যত্নে রাখা হত আর যখনই সে ফেরত নিতে আসত তখন প্রদান করা হত। বাবা বলতেন মানুষ বিশ্বাস করে সম্পদ রাখতে সবাইকে দেয় না, এ এক বিরাট সন্মানের বিষয় এটা মনে রাখবা। তাই নিজের সম্পদ সিন্ধুকের বাইরে Compartment এ রেখে Safe Vault এ পাবলিক প্রপার্টি রাখতে বলতেন। সন্তানদের পড়ালেখা ও সংসার খরচ ধান বিক্রি করে সংকুলন হত না। আমার আম্মা তার প্রায় সব গহনা আমাদের ১০ ভাই-বোন এর পিছনে ব্যায় করে দিয়েছিলেন। আমার বাবা গর্ব করে মানুষকে ডেকে বলতেন “আমি এক বিঘা না, দুই বিঘা না, কুড়ি বিঘা সম্পত্তি বিক্রি করেছি সন্তানদের পড়ালেখার জন্য। আমি কি ভুল করেছি?” আমি এর অনেকগুলো বিক্রির সাক্ষী। নিজের Safe Vault এ টাকা থাকার পরও তিনি প্রয়োজনে জমি বিক্রি করে দিয়েছেন কিন্তু ‘আমানত’ এ কখনও হাত দেননি। উনার বক্তব্য ছিল ঐ ব্যক্তি যে যে টাকার নোট জমা রেখেছেন হুবহু তাই ফেরত দিতে হবে, এই আমানত।
এই দুটি বিষয়ে আমার নিজের ব্যাখ্যা ছিল সে সময়ে যে টাকাপয়সা আমি লেনদেন করেছি তা আমার কাছে একান্নবর্তী পরিবারের আমানত। আর তা খরচ করে ফুটানি মারলে তো বাবার টাকা উড়ানোর জন্য আমার মর্যাদা হবে আধা। তাই আমানতের সুরক্ষা করতে হবে ও স্বনামে ধন্য পুরুষ হবার জন্য সচেষ্ট থাকতে হবে।
লেখকঃ অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম, অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।

ভালো লাগলে এই পোস্টটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই বিভাগের আরো খবর
 

কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি

Theme Customized By BreakingNews