ইনভিজিবল কিলার (অদৃশ্য মৃত্যুদূত) ।
মু. আমজাদ হোসেন
মাস্ক পরা যেন লোক দেখানো একটা আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে চারপাশে । লোক দেখানো নয়, করোনা দেখানো । কিন্তু এই মাস্ক বাঙালিকে মোটেও করোনা থেকে রক্ষা করতে পারবে না । কোনভাবেই না ।
প্রথমত এইসব নামকাওয়াস্তের মাস্ক বিজ্ঞানসম্মত নয় । এন৯৫ নামে যে মাস্ক পরতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছে, এসব আমাদের ডাক্তাররাও সবাই পায় না, আমরাতো বাতিলের খাতায় । করোনা আক্রান্ত রোগি যদি কাছে এসে হাঁচি কাশি দেয়, এসব বিশ পঞ্চাশ টাকা দামের মাস্কের বাপেরও ক্ষমতা নেই আপনাকে রক্ষা করে ।
আপনি অত্যন্ত সচেতন মানুষ । আপনি ঘরের ভেতরেই থাকেন সবসময় । কিন্তু হঠাৎই মনে হলো, বাজারটা না করলেই যে চলছে না আর ।
তো, নিজস্ব পিপিই পরেই বাজারে গেলেন । বাজারে মানুষের কাছ থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে বাজার করলেন, তারপর বাসায় ফিরে এলেন । কাছাকাছি কেউ হাঁচি কাশি দেয়নি । যতক্ষন বাইরে ছিলেন, মহামূল্যবান হেক্সাসল পকেট থেকে ক্ষনিক পরপর বের করে করোনাকে দেখিয়ে দেখিয়ে হাতে ঘষেছেন । বাসায় ফিরে সাবান দিয়ে আচ্ছাসে হাতমুখ ধুয়েছেন বিশ সেকেন্ডের যায়গায় এক মিনিট লাগিয়ে । আপনি কি ভাইরাসকে বিদায় করতে পেরেছেন ?
মোটেও না ।
আপনি বাজার থেকে কিনে এনেছেন ডাল, আলু, পেঁয়াজ, রসুন, লাল শাক, বরবটি, বিস্কুট, তেল, আটা, মাছ ইত্যাদি ইত্যাদি । এসবের কয়েকটি আবার নিষিদ্ধ পলিথিনে মুড়ে এনেছেন । কাঁচা বাজারে এবং মুদির দোকানে খোলা পড়ে থাকা সবজি এবং অন্যান্য খাদ্যবস্তুগুলিতে কিন্তু মাস্ক পরানো ছিল না । ওসবের গায়ে হয়তো করোনা ভাইরাস আয়েস করে বিশ্রাম নিচ্ছিল । আপনার বাজারের ব্যাগে ঢুকে কখন তারা আপনার বাড়িতে বেড়াতে চলে এসেছে আপনি তা ঘুণাক্ষরেও জানতে পারেননি ।
আপনি অতি সতর্ক মানুষ । স্বাস্থ্যবিধি নিখুঁতভাবে মেনে চলেন । তাই বাড়ি ফিরে কিছু সবজি সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলে অদৃশ্য ভাইরাসকে বিদায় করতে পেরেছেন বলে মনে মনে যখন আত্মপ্রসাদে ভুগছেন, করোনা ভাইরাস তখন আটা কিংবা বিস্কুটের প্যাকেটে, কিংবা পেঁয়াজের লাল শরীরে বসে খিক খিক করে হাসছে ।
ওদিকে আপনার স্ত্রী বাজার থেকে আনা যে পলিথিনগুলি ফ্রিজে মাছ-মাংশ সংরক্ষন করবে বলে ভাঁজ করে রান্নাঘরে গুঁজে রাখছে, সেগুলিতে বসে তক্কে তক্কে ছিল ভাইরাস । চান্স পেয়েই আপনার স্ত্রীর নরম হাতটা তার অজান্তেই খপ করে ধরে বসেছে ।
আপনি পকেট থেকে টাকাগুলি বের করে সাবান পানিতে ধুয়ে ফেলেননি নিশ্চয়? অসংখ্য হাত ঘুরে আসা নোংরা টাকাগুলির গায়ে হয়তো বহু করোনা ভাইরাস মিটিং করছে । আপনি পকেট থেকে বের করে রেখে দিলেন আলমারিতে । ভাবলেন, যাক্, ভাইরাস এখন আলমারিতে বন্দি ।
সাবধানের মার নেই । কাপড়ে কিছু ভাইরাস লেগে থাকতে পেরে ভেবে বাথরুমে ছুঁড়ে ফেললেন সব । ভালো । কিন্তু আপনি ভুলে গেছেন রাস্তা-ঘাটের রাজ্যের করোনা মেশানো থুতু আর হাঁচি কাশি মাড়িয়ে আসা আপনার চামড়ার স্যান্ডেল জোড়াকে বাথরূমে ছুঁড়ে ফেলতে ।
সাবান দিয়ে হাত ধুয়েছেন, মুখ ধুয়েছেন, মাস্ক ধুয়েছেন, কাপড় ধুয়েছেন, খাদ্যবস্তুগুলি ধুঁয়েছেন, পলিথিনগুলি ফেলে দিয়েছেন, স্যানিটাইজারে ঘর মুছে ফেলেছেন, স্ত্রীর হাতেও ছিল স্যানিটাইজার লাগানো । করোনা ভাইরাস আপনার টিকিটিরও নাগাল পায় নি । খামোকাই বকেছি এতক্ষন ।
গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে বিশ্বের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে বাজার থেকে দশ টাকায় কিনে আনা পত্রিকাটা বিছানায় খুলে বসেছেন । আরাম করবেন ।
আপনার পত্রিকার পাতায় করোনার খবর নয়, সত্যিকারের করোনা ভাইরাস বসে বসে ঝিঁমুচ্ছিল কয়েক ঘন্টা ধরে । এখন শিকারকে এত কাছে দেখতে পেয়ে সে খুশিতে অট্টহাসি দিয়ে উঠেছে ।
আপনার এক জোড়া কানের ক্ষমতা নেই এত কম ফ্রিকোয়েন্সির অট্টহাসি কোনদিন শুনবে ।
লেখকঃ মু. আমজাদ হোসেন,
সহঃ অধ্যাপক, ইংরেজি, কফিল উদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লক্ষ্মীপুর ।
কপিরাইট সত্ত্ব-২০২২ ছাত্রছাত্রী ডট কম, কারিগরি সহায়তায়ঃ বিগবস সফট বিডি
Leave a Reply